আবুল হাসনাত মিনহাজ
সুস্বাস্থ্য বা মুখরোচক স্বাদের জন্য তাজা ফল কে না খেতে চান। কিন্তু এই সময়ে ফল সবার কপালে জুটছে না। দেশীয় কিছু ফল ছাড়া বেশিরভাগ ফলের দাম মানুষের নাগালের বাইরে।মূল্যস্ফীতির চাপে যখন মানুষ হাঁসফাঁস করছে। তখন রমজান ঘিরে আগেভাগেই বাড়ানো হচ্ছে ফলের দাম।
রমজান শুরু হতেই ফলের বাজারে শুরু হয়েছে সীমাহীন নৈরাজ্য। রমজানে ইফতারিতে ফলের চাহিদাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ফলের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছেন। ফলের উচ্চমূল্যের কারণে গরীব ও মধ্যবিত্তদের পক্ষে বিদেশি ফল কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমে গেছে। এছাডা ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। এছাড়া বিদেশী ফল আমদানিতে গত এক বছর আগে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে সরকার। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে গিয়ে বাজারে প্রভাব পড়ে। এছাড়া কন্টেনার ভাড়া বৃদ্ধি, পরিবহন খরচসহ ও আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ার কারণে ফলের দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, ম্যান্ডারিন (ছোট কমলা), আঙুর ও নাশপাতি আমদানি হয়েছে ৯৩ হাজার ৩৬১ টন। এর আগের বছরের একই সময়ে এই পাঁচ ধরনের ফলের আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৬ টন। অর্থাৎ আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগের ফলে আমদানি কমেছিল ৪৫ হাজার ৯৬৫ টন বা ৩৩ শতাংশ।
দেশে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ফল আমদানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে আমদানিকারকদের নগদ টাকায় ফল আমদানি করতে হচ্ছে।
পবিত্র মাহে রমজানে অন্যান্য বছরের মতো এবারও বেড়েছে রোজায় চাহিদা বাড়া পণ্যের দাম। বিশেষ করে খেজুরের দাম ছুটেছে লাগামহীন। আগের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২০ দিনের ব্যবধানে মেডজুল, জিহাদি, তিনেশিয়া, সুফ্রিসহ ছয় পদের খেজুর কেজিতে ৩০০ টাকা দাম বেড়েছে। ছুটছে আপেল-কমলার দামও। গত এক মাসের ব্যবধানে এসব আমদানি করা ফলের দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ফল বিক্রেতা শাহীন জানান, রমজান শুরুর একদিন আগে যে ফলের দাম প্রতি কেজি ৩০০ টাকা ছিল এখন তা ৩৫০ টাকা। আর যে ফলের দাম কেজি ৪০০ টাকা ছিল এখন সেটির দাম ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। গড় হিসাবে কেজিতে ১০০ টাকারও বেশি দাম বেড়েছে।
রমজান শুরুর দুদিন আগেও ভারতীয় কমলা প্রতি কেজি ছিল ২০০ টাকা আর বৃহস্পতিবার ছিল ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা। ৩৮০ টাকা আনার ৪০০ টাকা কেজি, ২০০ টাকার মাল্টা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, ২৬০ টাকার নাশপাতি ৩৪০ টাকা, কাল রঙের আঙ্গুর ৩৭০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। আর নীল রঙের আঙ্গুরের দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভালো মানের আপেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সাধারণ মানের খেজুর রমজান শুরুর সময় দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বৃহস্পতিবার একই মানের খেজুর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। আজওয়া, মরিয়ম এবং দাবাসসহ ভালো মানের খেজুরের দাম আকাশছোঁয়া। এই মানের প্রতি কেজি খেজুর খুচরা দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বাজারে খেজুর কিনতে আসা রাসেল জানান, ভালো মানের খেজুর তো কেনা সম্ভব নয়। সাধারণ মানের খেজুর কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। রোজা শুরুর সময় সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুর ৩৫০ টাকা হাঁকালেও সেই খেজুরই এখন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দাম চায়। সাধারণ রোজাদারদের পক্ষে এখন খেজুর কেনা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে আমদানি ফলের পাশাপাশি দেশীয় ফলের দামও চড়া। রমজানের আগে ভালো মানের কলার প্রতি ডজন দাম ছিল ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। এসব কলার ডজন এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। এ ছাড়াও পাকা বেল এবং তরমুজসহ দেশীয় ফলও চড়া দামে বিক্রি করতে দেখা যায়।
জানা গেছে, দেশে ৭৮ ধরনের ফল উৎপাদন হয়, এর মধ্যে ১০ থেকে ১২টি প্রধান। দেশে প্রতিবছর ফলের চাহিদা প্রায় তিন কোটি টন। এর মধ্যে পৌনে দুই কোটি টন আমদানি করতে হয়। দেশে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, ভুটান, ব্রাজিল, তিউনিশিয়া, আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, মিসর, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফ্রান্স থেকে ফল আমদানি করা হয়। বাকি দেশে উৎপাদন করা হয়।
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়,
২নং গেইট টেকনিক্যাল মোড়।
ইমেইল- news@chattalamorning.com
এটি চট্টলা মর্নিং এর ইপেপার সংস্করণ