চট্টলা মর্নিং:
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল রেকর্ড পরিমাণ টাকা।পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্সে পাওয়া ২৩ বস্তা টাকা গুণতে সময় লেগেছে ১৫ ঘণ্টা।কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৯টি দান বাক্স থেকে পাওয়া গেছে রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এটি এ যাবতকালে দানবাক্সে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়ার রেকর্ড।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে টাকা গণনা শুরু করে রাত ১০টায় টাকা শেষ হয়। ২৩ বস্তা টাকা গুণতে দুই শতাধিক মানুষের প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লেগেছ।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দানবাক্সে পাওয়া ২৩ বস্তা টাকা গণনার কাজে অংশ নেয় পাগলা মসজিদ নূরানী কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১৪০ জন শিক্ষার্থী, রপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ দুই শতাধিক মানুষ।দীর্ঘ ১৫ ঘন্টা ধরে চলে গণনার কাজ।পাগলা মসজিদের নিচতলায় বিভিন্ন স্থানে থাকা দান সিন্দুকগুলো একে একে খোলা হয়। এরপর প্লাস্টিকের বস্তায় ভরা হয় টাকা। এর পর মাথায় করে নেয়া হয় মসজিদের দ্বিতীয় তলায়। মেঝেতে ঢেলে সকাল ৯টায় শুরু হয় টাকা গণনার কাজ।
রূপালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় পাগলা মসজিদের নামে একটি চলতি হিসেব রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর সিন্দুক খোলার সময় ব্যাংকের ৬০ থেকে ৮০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী টাকা গণনার কাজ করে। দুটি গণনার মেশিনসহ দিনভর টাকা গণনা শেষ করে পুলিশি নিরাপত্তায় টাকাগুলো ব্যাংকে পাঠানো হয়।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, এবার ৩ মাস ২০ দিন পর ৯টি দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা।এর আগে ১৯ আগস্ট সবশেষ মসজিদের ৮টি সিন্দুক থেকে পাওয়া যায় ৫ কোটি, ৭৮ লাখ, ৯ হাজার ৫২৫ টাকা। এবার আরও একটি দানসিন্দুক বাড়ানো হয়েছে। দানের টাকা জমা রাখা হয় মসজিদের নামে খোলা ব্যাংক একাউন্টে। দানের টাকা দিয়ে মসজিদ ও মাদরাসার খরচ চালিয়ে বাকি টাকা ব্যাংকে রাখা হয়। এর আয় থেকে জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেয়া ছাড়াও জটিল রোগে আক্রান্ত অসহায় মানুষকে সহযোগিতা দেয়া হয়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জানান, দানের টাকা দিয়ে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুতল পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, শীঘ্রই মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের নকশা অনুমোদন করা হবে। এর পর টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।মসজিদ কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হলে এখানে এক সাথে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে পাগলা মসজিদের অবস্থান। প্রায় দেড়শ বছর আগে এটি নির্মাণ করা হয়। তবে মসজিদ নির্মাণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি।একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরে। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর নির্মিত মসজিদটি পাগলা মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পায়। পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এ মসজিদে দান করে থাকেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
টাকা ছাড়াও লোকজন এ মসজিদে বিদেশি মুদ্রা, স্বর্ণালংকার, হাস, মুরগি, গবাদি পশুসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি দান করে থাকেন। এ ছাড়া দানবাক্স খোলার পর প্রতিবার অসংখ্য চিঠি পাওয়া যায়। রোগ থেকে মুক্তি, মনের বাসনা পূরণ, বাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া থেকে শুরু করে নানা আকুতি ও অপূর্ণতার কথা তুলে ধরা হয় এসব পত্রে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক থেকে পাওয়া প্রায় ২২ কোটি টাকা।
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়,
২নং গেইট টেকনিক্যাল মোড়।
ইমেইল- news@chattalamorning.com
এটি চট্টলা মর্নিং এর ইপেপার সংস্করণ