আবুল হাসনাত মিনহাজ
রমজানে একসাথে অনেককিছুর দাম বৃদ্ধি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ।এমনিতেই সময়টি পরিবারগুলোর জন্য বেশি খরচের মাস হিসেবে পরিচিত।নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া বড় একটা ধাক্কা স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ।
বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতারা বলছেন, ‘পণ্যের দামের এত ঊর্ধ্বগতি থাকলে আমরা কোথায় যাব? আমাদের ব্যয় বাড়লেও আয় তো বাড়ছে না!’সুতরাং পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিম্ন ও স্থির আয়ের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা গুরুত্ব দিয়েই ভেবে দেখা প্রয়োজন। মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকল থেকে রেহাই পেয়ে খেয়ে-পরে, চিন্তামুক্তভাবে যাতে বাঁচতে পারেন নিম্ন ও স্থির আয়ের মানুষ। রাষ্ট্রের নিকট এতটুকুই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা ২০ দশমিক ৫ এবং অতি দারিদ্র্যের সংখ্যা ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।এছাড়া রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নানা পেশার স্থির আয়ের মানুষ।যে কোনো পরিমাণ মূল্য বৃদ্ধিতেই এসব মানুষের ওপর পড়ছে বিরুপ প্রভাব।আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় হিমসিম খেতে হচ্ছে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে।দৈনিক, সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক আয় দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে অনেকের।অসীম অভাবের মধ্যে কোন অভাবটি আগে পূরণ করবেন এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেখা দিচ্ছে কপালে চিন্তা রেখা। কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন এসব নিম্ন ও স্থির আয়ের মানুষ তাদের দৈনন্দিন ভোগ ব্যয়। কাঁটছাট করতে হচ্ছে সন্তানদের শিক্ষা ব্যয়সহ বিভিন্ন আবদার। চাহিদা পূরণ করতে না পেরে দেখা দিচ্ছে পরিবারে অশান্তি।
ধনীরা টের না পেলেও দারিদ্র্য, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও স্থির আয়ের মানুষ মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা।মূল্য বৃদ্ধির এ প্রভাব গিয়ে পড়ে সমাজেও। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় অনেকে অবৈধ উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। মূল্যবৃদ্ধিকালীন ধনীরা আরো ধনী এবং গরীবরা আরো গরীব হয় বলে সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে আয় বৈষম্য।
অন্যদিকে, বাজারে নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির দায় নিতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা।তারা বলছেন, আড়তদারেরা পণ্য মজুদ করছে বলেই দাম বাড়ছে।আর তাতে মধ্য এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি এক ধরণের বড় চাপ তৈরি হয়েছে।তাদের অভিযোগ, আড়তদারেরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন, ফলে তাদেরও বাড়তি দামে পণ্য বেচতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বায়েজিদ বস্তিতে ছোট্ট একটি ঘরে তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন তারাবানু।প্রায় ২০ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করে একাই সংসার চালাচ্ছেন তারাবানু।তার তিন মেয়েই স্কুলে পড়ে,নিয়মিত প্রাইভেট পড়ার খরচ যোগাতে হয়েছে তাকে।এই চার সদস্যের পরিবারের কোন সদস্যই মাস খানেক ধরে মাছ বা মাংসসহ ভালো খাবার খাননি।তিনি জানিয়েছেন,বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে।জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আয় বাড়েনি পরিবারে।
সত্তার মিয়া বলেন, ‘মুদি দোকান থেকে জিনিস কেনার জন্য আগে ২০০ টাকাই যথেষ্ট ছিল।এখন ৪০০ টকাও কম।বস্তিতে সাড়ে তিন হাজার টাকা বাসা-ভাড়া,খাওয়া, বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল,যাতায়াতের খরচের পর তাদের গ্রামে পাঠানোর মতো খুব সামান্য টাকাই থাকে।পাঁচ বছর আগেও কম আয় করলেও সঞ্চয় করতে পারতেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাদের আয় না বাড়লেও জানুয়ারি থেকে ভাড়া বেড়েছে ৭০০ টাকা।
হাজেরা বেগম জানান,তাদের খাবারে তালিকায় থাকে সপ্তাহে দুই বার সস্তার মাছ এবং বেশিরভাগ দিন ভাতের সঙ্গে শুটকি,ডাল আর ডিম।নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বিভিন্ন সামাজিক স্তরের মানুষের কাছে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী।যারা ভোক্তাদের স্বার্থ নয়, বরং নিজেদের হীন স্বার্থে সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। মজুতদার, কালোবাজারি, মুনাফাখোর, চোরাকারবারি অধিক লাভের আশায় দেশের অভ্যন্তরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর অবৈধভাবে মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
Leave a Reply