চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ন্যায্য পাওনা পায়নি; মালিক সরোয়ার ও নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রামের কল্পলোক আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিকদের পাওনা মজুরি আদায় নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ নির্মাণ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন (বি-২২০৫) এর সদস্য মোঃ ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করেছেন, ভবন মালিক সরোয়ার ও নুর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে ব্যর্থ এবং তাদের সাথে ধাপ্পা খেলা চালাচ্ছেন।
মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, “আমি এবং অন্যান্য শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি এখনও পাইনি। বারবার অনুরোধ ও থানার সহায়তা চেয়েও কোনো পদক্ষেপ হয়নি। বরং মালিকরা আমাদের সংগঠনের নেতাদের মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।”
ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, কাজ সম্পন্ন করার পর শ্রমিকরা মালিকদের কাছে পাওনা মেটানোর জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেন। তবে সরোয়ার ও নুর মোহাম্মদ তাদের কথা না শুনে উল্টো হুমকি দিয়ে বলেন, অভিযোগ করলে মামলা করা হবে। পরে শ্রমিকরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পাওনার হিসাব নির্ধারণের জন্য থানার পক্ষ থেকে ভবনের ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মালিক পক্ষ নিজেই সেই প্রক্রিয়ায় বাধা দেন। পরে তারা প্রতিশ্রুতি দেন, যথাযথ পরিমাপের মাধ্যমে পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রায় এক বছর পেরিয়েও কার্যকর হয়নি।
শ্রমিকদের ওপর পুলিশি হয়রানি, পাওনা টাকার অভাব এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতীক্ষা তাদের জীবনের মানকে প্রভাবিত করছে। মোঃ ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, “আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য ফেডারেশন ও পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সহায়তা ছাড়া কিছুই সম্ভব হত না। মামলা দায়েরের পরও মালিকরা চুরি ও লুকোচুরি চালাচ্ছেন।”
শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সহায়তায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলা দায়েরের একদিনের মধ্যেই ভবনের সেন্টারিং কাজের সব মালামাল চুরি হয়ে যায়। এতে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো গুরুতর। শ্রম আইন লঙ্ঘন, প্রতারণা, হুমকি প্রদানের চেষ্টা এবং চুক্তি ভঙ্গ—সবই ফৌজদারি ও শ্রম আইনের আওতায় আসে। শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি সময়মতো পরিশোধ না করা হলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। প্রতারণার জন্য সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড আর হুমকির জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড প্রযোজ্য। চুক্তি ভঙ্গের ক্ষেত্রে আদালত ক্ষতিপূরণ আদেশ করতে পারে।
এ ঘটনা শুধুমাত্র শ্রমিকদের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। একজন শ্রমিক তার ঘামঝরা পরিশ্রমের মাধ্যমে ভবন নির্মাণে অবদান রাখেন, কিন্তু ন্যায্য পাওনা না পেয়ে হয়রানির শিকার হন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদকের একাধিকবার ফোনে সরোয়ার ও নুর মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
মোঃ ইসমাইল হোসেন:“আমরা দিনরাত পরিশ্রম করেছি। কিন্তু এখনো আমাদের পাওনা মেলেনি। মালিকরা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন, পুলিশি হয়রানি চলছেই। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি। আমরা চাই আমাদের ন্যায্য পাওনা দিতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিক।”
মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক, শ্রমিক ফেডারেশন:“এই ধরনের ঘটনা শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।”
Leave a Reply