কর্ণফুলী মেরিন ড্রাইভে অনিয়মের অন্যতম কারিগর ‘জসিম’: ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী
• সাধারণ মানুষের ক্ষতিপূরণ বণ্টনে নয়ছয়
• ইকুইপমেন্ট দেখভালের নামে কোটি টাকার হেরফের
• কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ, প্রতিবাদে ভয়ভীতি
• “নিলে নে, না নিলে পাবি না”—ভুক্তভোগীদের অভিযোগ
• এক সিনিয়র কর্মকর্তা: ‘বড় সাংবাদিকদের ছত্রছায়ায় বুক ফুলিয়ে দুর্নীতি’
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটি এখন স্থানীয়দের চোখে উন্নয়নের প্রতীক নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিচ্ছবি। এ প্রকল্পে সরঞ্জাম ও ইকুইপমেন্টের দেখভালকারী হিসেবে নিয়োজিত জসিম নামের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উঠেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। ভূমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে রাস্তার নির্মাণ সামগ্রী—প্রতিটি স্তরে তার বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।
বাকলিয়া বাস্তুহারা এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন,“আমার পাশে যে পরিবার ছিল, তারা পেলো ৬ লাখ টাকা, আর আমি পেলাম মাত্র ২ লাখ। জসিম বলছে, ‘নিলে নে, না নিলে পাবি না’। প্রতিবাদ করলেই পুলিশ দিয়ে ভয় দেখায়।”
স্থানীয় মুন্না নামে এক যুবক বলেন,
“৫০ হাজার মানুষ এখানে বাস করে। পানি নিষ্কাশনের কোনো সুস্থ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কালভার্ট দেওয়ার কথা ছিলো, সেটি জসিম ইচ্ছা করে বাদ দিয়ে দিয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ দিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলা করার ভয় দেখায়।”
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পানির প্রবাহের জন্য প্রয়োজনীয় নালা বা ব্রিজ না রেখে ব্যবহার করা হয়েছে পুরোনো, মরিচা ধরা লোহার পাইপ। যা স্বল্পমেয়াদে ব্যবহারের উপযোগী হলেও দীর্ঘমেয়াদে ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়ে গেছে।
স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ, রাস্তার নিচে দেওয়া বালুতে রয়েছে পলিথিন ও ময়লা। সিডিএ’র কর্মকর্তাদের আসার খবর পেলে এসব পলিথিন দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশ আসে উপর থেকে। অথচ এই কাজের তদারকিতে রয়েছেন জসিম। কিন্তু তিনি বরাবরই দায় এড়িয়ে গেছেন।
সিডিএ’র এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“জসিম ও সোহেলদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। কিন্তু তারা স্থানীয় বড় কয়েকজন সাংবাদিকের ছায়ায় থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওইসব সাংবাদিকদের মাধ্যমে চাপ আসে—অভিযোগ যেন চেপে যাই।”
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন সোহেল নামের আরেকজন, যিনি জসিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে পরিচিত। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের একটি প্রভাবশালী ‘অভ্যন্তরীণ চক্র’ সক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত চলমান থাকলেও কাজের মান বা গতিতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন নেই।
ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন—সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পে যারা অনিয়ম করে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ধ্বংস করছে, তাদেরকে কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জসিম বলেন,
“আমি শুধু সরঞ্জাম ও ইকুইপমেন্ট দেখভাল করি। উপকরণের মান ও নির্মাণ পদ্ধতি আমার আওতায় পড়ে না।” তবে মাঠে পাওয়া নিম্নমানের বালু ও পলিথিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এসব সঠিক নয়। দায় আমার নয়।”
তবে স্থানীয়দের চোখে জসিম-সোহেল-অসীমদের ঘিরে গড়ে উঠেছে এমন এক দুর্নীতির বলয়, যেখান থেকে মুক্তি চায় পুরো এলাকার মানুষ। তাদের একটাই দাবি—জবাবদিহি ও বিচার।
Leave a Reply