কবি যে অনুভব থেকে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে কবিতা রচনা করেন তা শ্রুতি মাধুর্যে, বাচিক শৈলিতে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেন আবৃত্তিশিল্পী কবিতা এক আশ্চর্য স্বপ্নময় ধ্বনি, আর আবৃত্তি তার প্রতিধ্বনি। কবির ভেতরকার আবেগ–অনুভূতি, উপলব্ধি ও নিজস্ব চিন্তা ভাবনাকে সুচারুভাবে ফুটিয়ে তোলেন একজন আবৃত্তি শিল্পী। আবৃত্তি হচ্ছে শিল্পীর স্মৃতির ধারাবাহিক সবাক চিত্র। কবিতা যদি হয় দেহ, আবৃত্তি তার প্রাণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান অতিথি একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন দেশ বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আবৃত্তি একটি শিল্প। কবি যে অনুভব থেকে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে কবিতা রচনা করেন, তা শ্রুতি মাধুর্যে, বাচিক শৈলিতে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেন আবৃত্তিশিল্পী।
তিনি আরো বলেন, ফেব্রুয়ারী মাস আমাদের জাতি সত্তার বিকাশে এক অনবদ্য সংযোজন।তিনি বলেন,পৃথবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।তিনি বলাতে পড়াতে ও লেখাতে ভাষাকে নষ্ট না করে আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি অমিথ ভাষায় বলা, লেখা এবং পড়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আবৃত্তিশিল্পীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা তাদের ভাষার প্রয়োগ ও মুন্সিয়ানার মাধ্যমে সমাজে যেকোনো বার্তা সহজে পৌঁছে দিতে পারেন যা অন্যদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, দেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নির্মাণ, জঙ্গিবাদী হামলাসহ মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের ওপর আঘাতকারী কালো শক্তির বিরুদ্ধে আবৃত্তিশিল্পীরা সব সময় রাজপথে নেমেছে প্রতিবাদী কণ্ঠে। মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পরাজিত শক্তিকে বধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
সভাপতির বক্তব্যে কবি ওমর কায়সার বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পৌঁছে দেয়া অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতির প্রায়োগিক শাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো আবৃত্তি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সহ নানা রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পটভূমিতে আবৃত্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তিনি আবৃত্তির মাধ্যমেই ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য আবৃত্তি শিল্পীদের প্রতি আহ্বান জানান।
আজ রবিবার বিকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় অমর একুশে বই মেলা মঞ্চে আবৃত্তি উৎসবে কবি ওমর কায়সার এর সভাপতিত্বে ও আবৃত্তি শিল্পী মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডালিয়া আহমেদ, বই মেলা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সম্মিলিত আবৃত্তি জোট চট্টগ্রাম এর সভাপতি ফারুক তাহের।
আলোচনা সভা সুমধুর কন্ঠে দলীয়, একক ও দ্বৈত আবৃত্তি পরিবেশন করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ উচ্চারণ আবৃত্তি কুঞ্জ, তারুণ্যের উচ্ছাস, স্বদেশ আবৃত্তি সংগঠন, প্রমিতি সাংস্কৃতিক একাডেমি, শৈশব বাচিক চর্চা কেন্দ্র, দৃষ্টি চট্টগ্রাম, প্রত্যয় শিক্ষা সাংস্কৃতিক একাডেমি, একুশ মানবিক আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, স্পৃহা আবৃত্তি নীড়, বৈখরি আবৃত্তি আলয়, মুক্তধ্বনি আবৃত্তি সংসদ । একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ডালিয়া আহমেদ, মসুম আজিজুল বসর, মিলি চৌধুরী ও প্রণব চৌধুরী। আগামীকাল সোমবার বিকাল ৪.০০ টায় অমর একুশে বই মেলা মঞ্চে ” গণ মাধ্যম সম্মিলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন আজাদী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এম এ মালেক।
Leave a Reply