শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ১ হাজার ৩০ জন যাত্রী নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়লো প্রথম ট্রেন।এর মাধ্যমে শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল।প্রথম ট্রেন যাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।যাত্রীদের পাশাপাশি রেল প্ল্যাটফর্মে জড়ো হন স্থানীয়রাও।ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা।
যাত্রী এবাদুল হক বলেন,কক্সবাজার থেকে প্রথম ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার জন্য ২৯ নভেম্বর টিকিট কেটে নিই।অবশেষে আজকে কাঙ্খিত স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। এখন থেকে যখন মন চায় ট্রেনে করে কক্সবাজার আসতে পারবো তাই খুবই ভালো লাগছে।
ঢাকাগামী যাত্রী আলামিন বলেন, ‘তিন বন্ধু মিলে কক্সবাজার ঘুরতে এলাম। ভাগ্যটা এতোই ভালো যে ফেরার পথে ট্রেন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি। এই অনুভূতিটা কীভাবে প্রকাশ করবো তা বুঝতে পারছি না। অসম্ভব ভালো লাগছে। এখানে সবচেয়ে ভালো লাগছে লকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।আমি চাইলে লকারে আমার ব্যাগ রেখে কক্সবাজার ঘুরতে পারবো।১৯৮০ সাল থেকে স্বপ্ন দেখছিলাম ট্রেন আসবে কক্সবাজার। অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণ হলো। স্বপ্ন দেখা মানুষটি আজ কক্সবাজার থেকেই ট্রেনে চড়ে ঢাকা যাচ্ছি।স্বপ্ন সত্যি হওয়াই চোখের কোণে পানি চলে আসছে।
বাণিজ্যিকভাবে রেল চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের তুলনায় দুই-তিন গুণ পর্যটক বাড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।পর্যটকদের নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপদে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে। টহল টিমের পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্স। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।
কক্সবাজার আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন বলেন,রেল চালুর মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করলো কক্সবাজার।কক্সবাজার প্রধানমন্ত্রীর বদন্যতায় কক্সবাজারবাসীর মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি এই রেল ঘিরে কক্সবাজারসহ দেশের অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হলো। আন্তঃনগর এই ট্রেন ২০টি বগি নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচল করবে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান ট্রেনটিতে কোন কেবিন সুবিধা নেই। এসি শোভন কোচে চেয়ার থাকবে পর্যাপ্ত। জানুয়ারি থেকে আরও কয়েকটি ট্রেন চালু হবে। তবে আপাতত লোকাল ট্রেন চালু হচ্ছে না।’ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। গেল ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার-দোহাজারি রেলপথে ট্রেন চলাচল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
Leave a Reply