বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
দুদকের মামলার আসামি হয়েও ফের চট্টগ্রামে পদায়ন ব্যবসার নামে ফয়সালের লাখ লাখ টাকা উত্তোলন, বিপাকে পাওনাদাররা লোকসানের নাটক দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ! রয়েল ক্যাপিটালের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ বেলায়েত হোসেন নয়ন চাকরিচ্যুত হোটেল জামানের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারের মানববন্ধন তানযীমুল উম্মাহ গার্লস মাদরাসা, হালিশহর শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান–২০২৫ সম্পন্ন বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তরুণ লেখক সম্মেলন ও ম্যাগাজিন মোড়ক উন্মোচন সম্পন্ন রাজাখালীতে অস্ত্রের মহড়া, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ফোরকান-ইকবাল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের উপদেষ্টা হলেন মনিরুল ইসলাম ইউসুফ নাম পাল্টে কোটি টাকার প্রতারণা: রায়ন্স থেকে গ্লোবাল প্যাসিফিক, অয়ন ও তার বাবার চক্র মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার আম্বিয়া সেরীন আবাসিক এপার্টমেন্ট ভবনে
নোটিশ
চট্টলা মর্নিং নিউজে আপনাকে স্বাগতম, আমাদের পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

নতুন ব্রিজে নৈরাজ্য: সড়ক নয়, যেন বাসস্ট্যান্ড

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত : সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
  • ৮৯ জন পড়েছেন

নতুন ব্রিজে নৈরাজ্য: সড়ক নয়, যেন বাসস্ট্যান্ড

• দল যার যার, চাঁদার ভাগ সবার
• রাস্তার মাঝেই চলে যাত্রী তোলার হিড়িক
• মামলা-জরিমানায়ও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পার্কিং
• মালিকদের অজুহাত: জায়গা নেই, দায় নিচ্ছে না কেউ
• বহদ্দারহাট টার্মিনাল এখন মাদক-জুয়ার স্বর্গরাজ্য!

চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতু নতুন ব্রিজ সংলগ্ন চত্বর যেন আজ একটি স্থায়ী যানজট ও নৈরাজ্যের প্রতীক। নগরের গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় প্রতিদিনই পরিণত হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগের উৎসে। নেই কোনো পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা, কার্যকর তদারকি কিংবা আইনের প্রয়োগ। পুরো সড়কজুড়ে চলছে একপ্রকার ‘গণদখল’, যার শিকার সাধারণ যাত্রী আর পথচারীরা।

নতুন ব্রিজ মোড়ে ঈগল, শ্যামলী, শাহ আমিন, পটিয়া, কক্সবাজার, বাঁশখালী, আনোয়ারাগামী বাসসহ প্রতিটি রুটেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্টেশন। সড়কের ওপরই বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলছে নির্ধারিত স্ট্যান্ড ছাড়াই। অটো, টেম্পোসহ নানা পরিবহনও রাস্তায় ঘাঁটি গেড়ে বসায় পুরো চত্বর পরিণত হয়েছে এক বিশৃঙ্খল স্থানে।

এর চেয়েও ভয়াবহ হলো—প্রতিটি রুটে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অননুমোদিত পরিবহন। এসব গাড়ির নেই ফিটনেস, নেই বৈধ কাগজপত্র, চালকদেরও নেই যথাযথ প্রশিক্ষণ। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা আর যাত্রী নিরাপত্তা পড়ে যাচ্ছে হুমকিতে।

শহরের প্রধান সড়কগুলোতে বাস দাঁড় করানো এখন যেন স্বাভাবিক চিত্র। মিনিবাসগুলো বুক চিতিয়ে যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে—না আছে দেখার কেউ, না বলার। ট্রাফিক পুলিশ বাধা দিলে হেলপার-চালকেরা কখনো সরাসরি চড়াও হয়, আবার কখনো তাদের পেছনে থাকা প্রভাবশালী মহলের হুমকিতে প্রশাসনই পিছু হটে। সরকার পরিবর্তনের পর পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ আরও শিথিল হয়ে পড়েছে। অনেক চালক-হেলপার এখন ট্রাফিক পুলিশকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো গণজমায়েত করে ‘মব’ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, যেন আইনের মুখোমুখি না হতে হয়।

বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের পরিবহন কেন্দ্র হলেও এখন পরিত্যক্ত। সন্ধ্যার পর এই টার্মিনালে শুরু হয় মাদক সেবন, জুয়া ও অনলাইন জুয়ার আসর। চালক শাহাজাহান জানান, “রাতে টার্মিনালে যাত্রী তুলতে ভয় লাগে। গাড়ির ভেতরে-বাইরে চলে মাদক সেবন। অনেকে যাত্রী সেজে ছিনতাইয়েরও চেষ্টা করে।”

ট্রাফিক বিভাগের দক্ষিণ জোনের ডিসি দাবি করেছেন, ‘অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে।’ কিন্তু মাঠপর্যায়ে এর কার্যকারিতা নেই। মামলার পরও প্রতিদিন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে বাসগুলো। ফলে একদিকে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

বাস মালিক সংগঠনগুলোর দাবি—‘টার্মিনালের জায়গা নেই, তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় দাঁড়ায়।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলোকে অস্থায়ী টার্মিনালে রূপান্তর করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিচালিত এসব পরিবহন মালিক চক্র এতটাই প্রভাবশালী যে, মামলা হলেও থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নতুন ব্রিজ মোড় এখন পরিণত হয়েছে চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে। প্রতিদিন হাজারো যানবাহন থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের চাঁদা, যা নিমিষেই বণ্টিত হচ্ছে শ্রমিক ইউনিয়ন ও সংগঠনের নামে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের অনুসারীদের মধ্যে। এখানে গাড়ি চলাচলের চেয়ে টাকা তোলা যেন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ক্ষমতার ছায়ায় এরা এতটাই বেপরোয়া যে, প্রশাসনও নিরব দর্শকের ভূমিকায়। গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক আশ্রয়ে পরিচালিত এক দুর্বিনীত চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট, যা নগরবাসীর জন্য স্থায়ী যন্ত্রণায় রূপ নিয়েছে।

ভোগান্তির কথা জানিয়ে শহীদ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘অফিস থেকে বাসায় ফিরতে মাত্র ৫ মিনিটের পথ লাগে এক-দেড় ঘণ্টা। কর্ণফুলী, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, দোহাজারী, কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই জটের শিকার হচ্ছেন। সময় অনিশ্চিত, ভাড়া বেশি, ভোগান্তি সীমাহীন।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
চট্টলা মর্নিং এর সকল স্বত্ব © ২০২৩-২০২৫ সংরক্ষিত
কারিগরি সহযোগিতায় ইনো. আইটি বাজার