নিজস্ব প্রতিবেদক:
থানচিতে এলজিইডির সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে ক্ষোভ
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় চলমান সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে, স্থানীয়রা নিম্নমানের নির্মাণে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার জন্য এলজিইডিকে দায়ী করছেন।
স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, থানচি বাজার থেকে আপ্রুমং পাড়া হয়ে রবার্ট পাড়া ও হানারাম পর্যন্ত ১.৭৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজে সাববেইজ মেকাডমে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইটের খোয়া এবং বালির পরিবর্তে পাহাড় কেটে আনা লাল মাটি। সড়কের কার্পেটিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে ঝিরি-ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত স্থানীয় পাথর এবং নিম্ন গ্রেডের বিটুমিন। ড্রেইন ও গাইড ওয়াল নির্মাণেও ব্যবহার করা হচ্ছে নষ্ট ইট ও খালের বালি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে এলজিইডির বান্দরবান কার্যালয় থেকে সড়কটির নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম ট্রেডার্সকে। প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই কাজের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন রোটারিয়ান আনিসুর রহমান সুজন, যার ছোট ভাই মেহেদী বাস্তবে কাজটি তদারকি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানান, কাজ শুরুর আগে নির্মাণসামগ্রীর কোনো ল্যাব টেস্ট করা হয়নি। বরং দপ্তর ‘ম্যানেজ’ করে কয়েকগুণ বেশি দামে কাজ আদায় করেছেন ঠিকাদার সুজন। এর আগেও তার করা একাধিক প্রকল্পের কাজ এক বছরের মধ্যেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
তারা আরও জানান, সম্প্রতি তিনি তিন্দু-ডিম পাহাড় সড়কের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প ৮ শতাংশ অতিরিক্ত দামে লাভ করেছেন, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে তথাকথিত ‘পাহাড়ি লাইসেন্স’। এর মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে এবং ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী। প্রকল্পে যে পরিমাণ মাটি কাটার কথা বলা আছে, বাস্তবে তার ১০ শতাংশও কাটা হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার আনিসুর রহমান সুজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
থানচি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী এমদাদুল হক বলেন, “প্রথমদিকে ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করছিল, তাই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কিছুটা মানোন্নয়ন হয়েছে। তবে কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এখনো বরাদ্দ না থাকায় কোনো বিল ছাড় করা হয়নি।”
স্থানীয় সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে তার কার্যাদেশ বাতিল করা হোক।
Leave a Reply