সরকার পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে মাদক চক্রগুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এক সময়ের অভিযানে আতঙ্কিত অলিগলিগুলো এখন রীতিমতো মাদকের ‘স্বর্ণপথে’ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন মাদকের সরবরাহের খবর মিলছে। আগের চেনা মুখগুলো ফিরে এসেছে মাঠে, আর সেই সাথে ফিরে এসেছে কথিত কিছু ‘পুলিশি সুবিধাভোগী’ চক্র।
সরকারি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিমালার বাস্তবায়ন এখন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। নেই নিয়মিত অভিযান, নেই নজরদারি, আর ঘন ঘন বদলির পেছনেও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। হালিশহর, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, বাকলিয়া, অক্সিজেন, পতেঙ্গা,বায়েজিদসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ইয়াবা, গাঁজার মতো মাদক ব্যবসা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, “আগে পুলিশ ভয় দেখাত, এখন তারা নীরব দর্শক।”
সাম্প্রতিক সময়ে মাদক ব্যবসায় ‘নারী’ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। আইস (ক্রিস্টাল মেথ), ইয়াবা ছাড়াও তরুণদের লক্ষ্য করে নারী দিয়ে কাস্টমার তৈরির নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে সক্রিয় এই সিন্ডিকেটগুলো তরুণদের আসক্ত করে দলে টানছে, মূলত মুনাফার জন্য।
রাজনৈতিক দলের কোন্দল, ক্ষমতা দখলের লড়াই আর প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে পুরনো অপরাধী চক্র আবার সক্রিয়। কিছু এলাকায় মাদক কারবারের দেখভাল করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির আত্মীয়রা। মোবাইল কোর্ট কার্যত অচল, থানায় অভিযোগ দিয়েও মেলে না কার্যকর ব্যবস্থা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে তবে কি মাদকের বিরুদ্ধে কেউই লড়বে না?
“মাদক এখন শুধু ব্যবসা নয়, একেকটা বড়সড় বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে। আগে যারা ভাড়ায় চালিত ছিল, তারা এখন গ্যাং চালায়, ফ্ল্যাট কেনে, মোটরসাইকেল চালায়।”
হুমায়ুন কবির খন্দকার, উপপরিচালক
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মেট্রো (দক্ষিণ) বলেন,“চট্টগ্রামে বেশিরভাগ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত আইস বড় আকারে ধরা পড়েনি, মাঝে মাঝে ইয়াবা ও গাঁজা জব্দ হয়। নারীরা অনেক সময় পরিবারের পুরুষ সদস্যদের প্ররোচনায় এই চক্রে যুক্ত হয়।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আনোয়ার বলেন, “রাষ্ট্র যখন অস্থির, তখন অপরাধীরা সংগঠিত হয়। এটি শুধু প্রশাসনের ব্যর্থতা নয়, বরং রাজনৈতিক উদাসীনতার ফল। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে পড়বে।”
Leave a Reply