আবুল হাসনাত মিনহাজ
বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার নিয়ে যেন গুজবের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এই গুজবের সর্বশেষ আক্রান্ত দেশের মানুষ। বাস্তব অবস্থা দাঁড়িয়েছে, রাসেল ভাইপার নিয়ে ফেসবুকে যেকোনো ধরনের পোস্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ নেটিজেন মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে এসব পোস্ট শেয়ার করছেন। কিন্তু শেয়ার করা ওইসব পোস্ট যে মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিষধর সাপ চন্দ্র ভোড়া বা রাসেল ভাইপার ধরা পড়ায় সেটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পাশাপাশি এই সাপের বিষক্রিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা।
এই সাপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটু বেশিই বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। মূলত রাসেল ভাইপার পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের সেরা ১০ এর মধ্যেও নেই এবং এই সাপের এন্টিভেনাম রয়েছে তবে ওঝার কাছে না যেয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। এমনকি নিকটস্থ ফার্মেসিতেও এন্টিভেনাম পাওয়া যায় যা বাসায় কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য।এই সাপ বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকেই ছিল তবে এই গরমের কারণে তাদের একটিভিটি বাড়তে পারে অথবা অতিরঞ্জিতও হতে পারে।গবেষণা বলছে গুইসাপ, পেঁচা, বনবিড়াল, খেকশিয়াল জাতীয় প্রাণী কমে যাওয়ায় ইঁদুর বেড়ে গেছে অন্যদিকে এই সাপের আবার প্রিয় খাবার ইঁদুর। সবমিলিয়ে প্রকৃতির স্বাভাবিকত্ব ধ্বংসের কারণেও এই সাপ বাড়তে পারে।
তবে এই সাপ তেড়ে এসে কাউকে কামড়ায় না বরং মানুষ দেখলে সে পালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। গায়ে আঘাত লাগলে কিংবা একদম কাছে গেলে সে ভয়ে ছোবল দিতে পারে তবে তার ছোবল দেওয়ার ক্ষমতা খুবই ক্ষিপ্র।এই সাপ অন্যদিকে অন্যান্য সাপের চেয়ে একদিকে ভালো সে মানুষের আনাগোনা পেলে জোরে হিস হিস শব্দ করে ফলে সহজেই সতর্ক হওয়া যায়। এই সাপের কামড়ে ঠিক কতজন মারা গেছে সেটাও একটা গুজব আর বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে অজগর ভেবে ধরার কারণে।
তবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, পটিয়া,আনোযারা, মহেশখালীসহ অনেক উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে গুজব।সেখানে ‘রাসেল ভাইপার’ নামের বিষধর সাপের উৎপাতের খবর ছড়ানো হলেও এখনো পর্যন্ত জেলার কোথাও এই সাপ উদ্ধার বা এর দ্বারা কারো আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগ রাসেল ভাইপার নিয়ে গুজবের ব্যাখ্যা দিয়েছে। ‘রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু,১০জন ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট করা হয়েছে। বিষয়টি একটি গুজব।এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সচেতন থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’ স্বাস্থ্য বিভাগের ওই পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,‘রাসেল ভাইপার অত্যন্ত বিষধর হলেও অন্যান্য বিষধর সাপের মতোই তা লাজুক প্রকৃতির। নিজ থেকে তেড়ে আসে বা মানুষের আবাসস্থলে উঠে আসে এমন তথ্য সঠিক নয়। বরং এটি নির্জন ও নিরিবিলি স্থানে গুঁটিসুঁটি মেরে থাকতে পছন্দ করে এবং উত্ত্যক্ত করলে প্রথমে জোরে ফোঁসফোঁস শব্দ করে। এবং অধিক উত্ত্যক্ত করলে দংশন করে।
তাই সাপ দেখা গেলে কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সাপকে মারতে যাবেন না। এতে সে ক্ষিপ্ত ও আতঙ্কিত হয়ে দংশন করতে পারে। সাপের অস্তিত্ব দেখা গেলে বনবিভাগকে অবহিত করুন। কাউকে যেকোনো প্রকার সাপে দংশন করলে কোনো প্রকার দেরি না করে নিকটতম সরকারি হাসপাতালে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান।’
Leave a Reply