আওয়ামী লীগের ডোনার থেকে বিএনপির সহচর!
শেখ হাসিনার সরকারের মেয়াদ শেষে রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে এক ধরনের অদ্ভুত ভোলবদল। ক্ষমতার পালাবদলের সম্ভাবনায় অনেক রাজনৈতিক ডোনার এবং বিতর্কিত ব্যবসায়ী এখন নতুন আশ্রয় খুঁজছেন। সেই তালিকায় উঠে এসেছে চট্টগ্রামের মিন্টু আহমেদের নাম—যিনি এক সময় ছিলেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ঘনিষ্ঠ, বর্তমানে বিএনপির আশেপাশে ঘোরাফেরা করছেন।
অতীত পরিচয়: ক্ষমতাসীন দলের ছায়াতলে প্রভাব বিস্তার
চট্টগ্রামের বাসিন্দা মিন্টু আহমেদের পরিচিতি মূলত একজন অর্থদাতা ও সুবিধাভোগী হিসেবে। স্থানীয় সূত্র বলছে, তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা চৌধুরী বাবরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নির্বাচনের মৌসুমে আওয়ামী লীগের প্রচারণায় সরব অংশগ্রহণ, স্থানীয় কাউন্সিলরদের জন্য ভোট প্রার্থনা এবং নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল নিয়মিত।
সুদ-জুয়ার সাম্রাজ্য
তবে মিন্টুর আয়ের প্রধান উৎস রাজনীতি নয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিচালনা করে আসছেন সুদের ব্যবসা। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, মিন্টুর কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন চট্টগ্রামের বহু ব্যবসায়ী, এমনকি কিছু সরকারি কর্মকর্তাও। পাশাপাশি তিনি জুয়ার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত, বিশেষ করে গোপনে পরিচালিত ক্রীড়াভিত্তিক বাজির আসর এবং কার্ডের খেলার মাধ্যমে তিনি একটি বিতর্কিত অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।
এই বিতর্কিত আয়ের জোরেই রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ দোকান নির্মাণ ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মিন্টু। আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় এই দখলদারিত্ব অনেকটা নিরবচ্ছিন্নই ছিল গত ছয় বছর।
নতুন খেলা: বিএনপির আশ্রয়ে ‘পরিচয় পরিবর্তন’
৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে পড়েন মিন্টু। এরপর শুরু হয় বিএনপির নেতাদের সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা। কিছুদিনের মধ্যেই মিন্টুর ছবি ভেসে ওঠে বিএনপির কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে তিনি পরিচয় দিচ্ছেন “বিএনপির সক্রিয় কর্মী” হিসেবে।
তবে স্থানীয় বিএনপি নেতারা মিন্টুর এই নতুন পরিচয় নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাচ্ছেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতা আবুল হাশেম বক্কর বলেন,
“আমি এই মানুষকে চিনি না, আমার সাথে ওর ছবি আসবে কোত্থেকে? দলের কোনো কর্মসূচিতে তাকে দেখিওনি।”
প্রশ্ন উঠছে
মিন্টুর মতো বিতর্কিত ব্যবসায়ী কীভাবে রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে ফের সুবিধা আদায় করছেন? সুদ-জুয়ার টাকায় রাজনৈতিক রঙ পরিবর্তন কতখানি বিপজ্জনক? আর রাজনৈতিক দলগুলো কি তাদের আশেপাশের এইসব বিতর্কিত ‘ডোনার’দের সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক?
এই প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে। তবে মিন্টু আহমেদ এখন রাজনৈতিক মাঠে একটি ‘ভোলবদলের’ প্রতীক হয়ে উঠছেন—যেখানে আদর্শ নয়, সুবিধাই যেন একমাত্র মূলধন।
অনুসন্ধান পর্ব নিয়ে আসছে ভিডিও বিস্তারিত…..
Leave a Reply