চট্টলা মর্নিং:
১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিসেনারা নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর পিটিআইতে রাজাকারদের সর্বশেষ ও প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা উড়িয়েছিলেন।
নভেম্বর মাস থেকে মুক্তিসেনারা নোয়াখালী জেলাতে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুক্তিসেনাদের প্রবল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ৬ ডিসেম্বর গভীর রাত থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানি আর্মি ও মিলিশিয়ারা। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালী জেলাকে চুড়ান্ত ভাবে মুক্ত করে তুলে।
৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত দিবসে উপলক্ষে নোয়াখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড নোয়াখালী জেলা কমিটির আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পিটিআই-সংলগ্ন মুক্তমঞ্চের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পরে বিজয় শোভাযাত্রা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সন্ধ্যায় বিজয় মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশেষ বুলেটিন মুক্তিযুদ্ধা বার্তা প্রধান উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. শাহজাহান- বিশেষ বুলেটিন মুক্তিযুদ্ধা বার্তার সম্পাদক সাংবাদিক রাসেদ বিল্লাহ চিশতীকে বলেন, ৭ ডিসেম্বর বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুলের রাজাকার ক্যাম্প, মাইজদী কোর্ট স্টেশন, জিলা স্কুল, দত্তের হাটের নাহার মঞ্জিল রাজাকার ক্যাম্পে আমাদের মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের চাপে একে একে আত্মসমর্পণ শুরু করে। এরপর পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ (পিটিআই) শহরে আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই আক্রমণে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ) বৃহত্তর নোয়াখালীর অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সন্ধ্যার আগেই নোয়াখালীকে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত করা সম্ভব হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। বহু বাধা অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনারা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী দখলে নেয়। চালাতে থাকে জেলা সদরের সোনাপুর-শ্রীপুর, রামহরিতালুক, বেগমগঞ্জের কুরিপাড়া, গোপালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। এ সময় হানাদাররা গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে।
কোম্পানীগঞ্জের বামনী, তালমাহমুদের হাট, ১২ নম্বর স্লুইসগেট, সদরের ওদারহাট, করমবক্স বাজার, বেগমগঞ্জের ফেনাকাটা পুল, রাজগঞ্জ, বগাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন অনেক মুক্তিযোদ্ধা।