চট্টগ্রাম মেডিকেল ঘিরে ফের সক্রিয় এম্বুলেন্স সিন্ডিকেট
বাইরের গাড়িকে মারধর, স্বজনদের জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে চড়া ভাড়া
স্টাফ রিপোর্ট | চট্টগ্রাম | জুন ২০২৫
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দীর্ঘদিন ধরে চলা ‘এম্বুলেন্স সিন্ডিকেট’ আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল চত্বরজুড়ে গড়ে ওঠা এই প্রভাবশালী চক্র সাধারণ রোগী ও মৃতদেহ বহনকারী স্বজনদের জিম্মি করে তুলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাইরের কোনো এম্বুলেন্স চট্টগ্রাম মেডিকেল এলাকায় প্রবেশ করলেই তা বাধার মুখে পড়ে। চালকদের মারধর, হুমকি এমনকি গাড়ি আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া।
‘সমিতি’র নামে দখল ও নিয়ন্ত্রণ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি কথিত “এম্বুলেন্স মালিক সমিতি”র নামে টেবিল বসিয়ে হাসপাতাল চত্বর নিয়ন্ত্রণ করছে ইউসুফ ওরফে “ল্যাংগা ইউসুফ” এবং হাসান নামের দুই ব্যক্তি। তাদের ব্যবহৃত নম্বর (০১৮১৯৮৮২২৪৩ এবং ০১৯৯১২৩৪১২১) থেকেই মোবাইল ফোনে এম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ, ভাড়ার দর-কষাকষি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ রয়েছে।
এক চালক জানান, “আমরা বাইরে থেকে গাড়ি নিয়ে এলে ওরা ঘিরে ধরে। বলে, বাইরের গাড়ি চলবে না। গাড়ি রাখতে চাইলে ওদের মাধ্যমেই রাখতে হবে, না হলে সমস্যা হবে।”
চড়া ভাড়া, সীমাহীন হয়রানি
চট্টগ্রামের আশপাশের উপজেলায় মৃতদেহ পরিবহনের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া, যেখানে স্বাভাবিকভাবে এই রুটে ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় এম্বুলেন্স পাওয়া যায়। ঈদ বা রমজানের সময় এই ভাড়া আরও বাড়িয়ে তোলা হয়।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, “মেডিকেল থেকে লাশ নেওয়ার সময় আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। বাইরের গাড়ি আনতে পারি না। ওরা বলে–আমাদের গাড়ি না নিলে ছাড়পত্র মিলবে না।”
সহযোগী চক্রের নেটওয়ার্ক
এ সিন্ডিকেট পরিচালনায় ইউসুফ-হাসান ছাড়াও আরও কয়েকজন জড়িত, যাদের মধ্যে রয়েছেন:
মুরগি মিলন, ডেঙ্গু আলমগীর,শরীফ
নুরুল কবির পলাশ তারা হাসপাতালের গেট ও আশপাশে অবস্থান করে বাইরের গাড়িকে আটকে দেয়। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী চিকিৎসকদের মৌখিক অনুমতির কথা বলে ফুটপাত দখল করে টেবিল বসিয়ে বসেছে, যার কোনো লিখিত অনুমোদন নেই। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কিছু কর্মচারীও এই সিন্ডিকেটকে ‘সার্ভিস চার্জ’ দিয়ে সহায়তা করে আসছে।
প্রশাসনিক নীরবতা ও প্রশ্নবিদ্ধ নিরবতা
সিন্ডিকেটের এই অবাধ কর্মকাণ্ড হাসপাতাল প্রশাসনের একাংশের নীরব সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ওয়ার্ড মাস্টার অফিস থেকে মৃতদেহ ছাড়পত্রের সময় রোগীর স্বজনদের সিন্ডিকেটের নম্বর দেওয়া হয় বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একজন স্বজন বলেন, “আমরা যখন নিজের এম্বুলেন্স দিয়ে মরদেহ নিতে যাই, তখন বলা হয়–এই নম্বরে কল করেন, বাইরের গাড়ি আনলে সমস্যা হবে। এটা কি সরকারি হাসপাতাল, না কি কারও ব্যক্তিগত এলাকা?”
সাধারণ মানুষের শেষ ভরসাও দখলে
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের চিকিৎসার শেষ ভরসা। অথচ সেই জায়গায় সিন্ডিকেটের দখলদারি জনদুর্ভোগকে সীমাহীন করে তুলেছে। এতে করে একদিকে রোগীর স্বজনেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক চাপ।
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে দাবি
স্থানীয় নাগরিক সমাজ, রোগীর স্বজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—
✅ অবিলম্বে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ‘এম্বুলেন্স সিন্ডিকেট’ ভেঙে দেওয়া হোক
✅ বাইরের বৈধ গাড়ি প্রবেশে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক
✅ হাসপাতাল এলাকায় ফুটপাত ও গেটসংলগ্ন জায়গা থেকে অবৈধ টেবিল ও দখল উচ্ছেদ করা হোক
✅ সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মচারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়,
২নং গেইট টেকনিক্যাল মোড়।
ইমেইল- news@chattalamorning.com
এটি চট্টলা মর্নিং এর ইপেপার সংস্করণ