নিজস্ব সংবাদদাতা:
চট্টগ্রামের হালিশহর থানার জি-ব্লক এলাকায় অবস্থিত “দুরন্ত বাজার” সুপারশপে গত ৪ জুন সন্ধ্যায় ঘটে এক নাটকীয় ঘটনা। পাওনা টাকা আদায়ের দাবিতে একদল ব্যক্তি সুপারশপে ঢুকে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর মোহাম্মদ শাহেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন দীর্ঘসময়। এরপর শুরু হয় ভাঙচুর, লুটপাট এবং কর্মরত কর্মচারীদের ওপর মারধর।
ঘটনার সময় সুপারশপে থাকা কর্মীরা—হাসানুল ইসলাম ইমতিয়াজ, আবু আহসান আলভি, শাহাবুদ্দিন, শামসুদ্দিন বাবু ও মামুন যুবরাজ—সহ আরও কয়েকজন নিরীহ কর্মচারী আক্রান্ত হন। তারা কেউই ব্যবসার আর্থিক লেনদেনে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও মামলা হয়নি এখনো
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, একদল ব্যক্তি দোকানে প্রবেশ করে হুমকি,মারধর, ভাঙচুর ও নগদ অর্থ এবং মালামাল নিয়ে যায়। আক্রান্ত কর্মচারীদের কয়েকজন চিকিৎসাও নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, হামলায় জড়িত ছিলেন:
রাসেল সরকার, নার্গিস আক্তার নীরা, কাজী মুনজুরুল করীম,লুৎফর,আমিন, শাকিল,সাব্বির, জাহিদুল ইসলাম শাহীন, সাহাদাত হোসেন, শাকিল, বজলুর রহমান, রিপন,রিয়াদ,হান্নান,জাহেদা আক্তার সাথী, রাশেদা।
তবে এতসব ঘটনার পরও হালিশহর থানায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা গ্রহণ করা হয়নি।
‘আইনের চেয়ে জবরদস্তি!’—মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন,
“যদি কারও কাছে টাকা পাওনা থাকে, তাহলে তার আইনি পথ আছে। কিন্তু একজন ব্যবসায়ীর দোকানে ঢুকে কর্মচারীদের মারধর, ভাঙচুর, লুটপাট—এসব স্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ।”
তাদের দাবি, এই ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা উদ্বেগজনক এবং এতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা বাড়ে।
‘ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত, পালিয়ে যাইনি’—শাহেদের অবস্থান
ব্যবসায়িক সংকটে থাকা নুর মোহাম্মদ শাহেদ বলেন,
“সবাইকে টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতারণা করিনি। ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। আমি দোকানেই আছি, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই।”
শাহেদ জানান, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দাবি থাকলেও তিনি বিষয়গুলো আদালত বা আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করতে চান।
তিনি আরও দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একদল লোক ব্যবসায়িক প্রতিহিংসা থেকে তার উন্নয়নমুখী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
‘ফেনী লাইন’, সস্তায় মাংস বিক্রি—মানবিক উদ্যোক্তা ছিলেন এক সময়
নুর মোহাম্মদ শাহেদ কয়েক মাস আগে ফেনী জেলার যাত্রীদের জন্য “ফেনী লাইন” নামে একটি বাস সার্ভিস চালু করেন। একইসাথে রমজানে গরীব ও মধ্যবিত্তদের জন্য মাত্র ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করে প্রশংসা পান। স্থানীয়রা বলছেন, তার জনপ্রিয়তা অনেকের সহ্য হয়নি।
এক প্রতিবেশীর ভাষায়, “যিনি উন্নয়নের কথা ভাবেন, সেবা দেন—তাকে ঘিরে এমন গণ-আক্রমণ সভ্য সমাজে কাম্য নয়।”
আইন না প্রতিশোধ—কোন পথে সমাজ?
এই ঘটনা শুধু এক ব্যবসায়ীর আর্থিক সংকট নয়, বরং একটি সমাজের আইনি শাসন বনাম “মব জাস্টিস”-এর দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি। একজন ব্যর্থ ব্যবসায়ীকে অপমান ও সহিংসতার মাধ্যমে দমন করা কতটা গ্রহণযোগ্য? কর্মচারীদের ওপর হামলা, দোকানে লুটপাট, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা—সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এই সমাজে আইনের জায়গা কোথায়?
নুর মোহাম্মদ শাহেদ হয়তো আর্থিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু তার প্রতি সংঘটিত সহিংসতা আমাদের একটি বড় প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়—ন্যায় কি হবে আদালতে, না রাস্তায়?
Leave a Reply