মো:রোহান
চট্টগ্রামের হালিশহর থানার আনন্দিপুর এলাকায় মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নালায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছিল শিশু হুমায়রা। গত ৯ জুলাই বিকেলে বৃষ্টির সময় রাস্তায় হাঁটার পথে হঠাৎ উন্মুক্ত নালায় পড়ে যায় ৩ বছরের এই শিশু। স্থানীয়রা জানায়, প্রবল পানির স্রোতের কারণে মুহূর্তেই তলিয়ে যায় হুমায়রা। ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর এলাকাবাসী শিশুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার তিনদিন পরও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দুর্ঘটনাস্থল সেই উন্মুক্ত নালাটি রয়ে যায় আগের মতোই প্রাণঘাতী ও ঝুঁকিপূর্ণ। পরে এলাকাবাসী নিজেরাই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নালাটি আংশিক ঘিরে রাখার চেষ্টা করে।
কিন্তু গতকাল রাতে টানা বর্ষণে আবারো জলমগ্ন হয়ে পড়ে আনন্দিপুর। শহরের পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় নালার পানি উপচে পড়ে পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেই একই নালা, যে নালায় হুমায়রা হারিয়ে গিয়েছিল চিরতরে, আজও দাঁড়িয়ে আছে যেনো মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুমিন ইসলাম বলছেন—
“শুধু হুমায়রা নয়, এই নালার মুখে পড়ে যে কেউ প্রাণ হারাতে পারে। কতদিন পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?”
এই ঘটনার পরও সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন কিংবা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ এবং আতঙ্ক দুই-ই বেড়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে নালায় পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন। এ ঘটনার তদন্তে চসিক নিজেদের কোনো দায় খুঁজে পায়নি। তদন্ত কমিটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের উদাসীনতা ও মায়ের কর্মস্থলের অবহেলাকে দায়ী করেছে।
রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন চসিক মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন।
এ সময় চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। সম্প্রতি কানাডা সফর করে আসার পর নগরীর টাইগারপাসে অবস্থিত চসিকের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক মেয়র বলেন, যে নালায় পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সেখানে স্ল্যাব দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে শিশুটির পরিবার ও তার মায়ের কর্মস্থলের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদের শিশুটিকে দেখে রাখার দরকার ছিল। শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব তো পরিবারের। সিটি করপোরেশনের পক্ষে তো প্রত্যেক শিশুর পেছনে গার্ড রাখা সম্ভব নয়। এটি অ্যাবসার্ড। তবে প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি এভাবে মারা যেতেন, তাহলে সিটি কর্পোরেশন দায়িত্ব নিত।
ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ওয়াসা নগরীর হালিশহর এলাকায় রাস্তা কাটার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানছে না। সেখানে ইচ্ছেমত টিনের ঘেরাও দিয়ে রাস্তা কাটছে। আবার সে কাটা সড়ক ঠিকভাবে সংস্কারও করছে না। ওয়াসা হালিশহরকে নষ্ট করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ওয়াসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
সংবাদ সম্মেলনে চউকের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এমন একটি এলাকায় কিভাবে পোশাক কারখানার জন্য ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেল? কিভাবে বাণিজ্যিক ভবন করেছে? এগুলো চউকের দেখার দায়িত্ব। চউকের কাছে তা জানতে চাই।
এর আগে গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে হালিশহর থানার আনন্দিপুর এলাকায় নিহত শিশুর বাসায় উপস্থিত হয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়র বলেন, এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরপরই আমি উদ্ধার কার্যক্রম তদারকির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। এরইমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য নগর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটি সুপারিশমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র।
Leave a Reply